পিআরের দাবিতে আন্দোলন নির্বাচন পেছানোর কৌশল

পিআরের দাবিতে আন্দোলন নির্বাচন পেছানোর কৌশল

বি. জেনারেল ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম (অব.)

আজ যখন বাংলাদেশের রাজনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, তখন জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বস্তবতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবারও সেই প্রাসাদ্য শুয়ে হাঁটতে শুরু করেছে। এই দলটির সাম্প্রতিক কর্মসূচি, বিশেষ করে প্রচগিত নির্বচনী ব্যবস্থার বিরজে আন্দোলনের নামে জনমত তৈরির যে চেষ্টা, তা স্পষ্টভাবে জাতি ও রাষ্ট্রের ডার্সে লেমান জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে বিভ্রান্ত করার কৌশণ এবং কালক্ষেপণের অংশমাত্র।

প্রচলিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতা করে জামায়াত আজ আবারও তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছে। দেশের মানুষ ভুলে যায়নি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকার জন্য এই দল ও তাদের সহযোগীরা কিভাবে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাতার আড়ালে, কখনও ইসলামী ছাত্রশিবির আবার কখনও অন্য নামে তারা সংগঠিত হয়ে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।

আজ তারা যে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির দাবি তুলেছে, সেটিও মূলত একটি বিভ্রান্তিকর চাল। বাংলাদেশের জনগণের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে কাঠামো, সেখানে এই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক এবং অপ্রাসঙ্গিক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনকে বিলম্বিত করা, চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিপথে নিক্ষেপ করা এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করা।

জামায়াতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা সবসময় জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে। কখনও ধর্মকে ব্যবহার করেছে, কখনও বিদেশি মদদকে হাতিয়ার বানিয়েছে, আবার কখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাঁধে ভর করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য কখনও জনগণের কল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে তাদের সমঝোতাও একই কৌশলের অংশ। বিএনপি যখন ক্রমাগতভাবে রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত, তখন জামায়াতের মতো একটি বিতর্কিত ও জনগণ প্রত্যাখ্যাত দলের ওপর ভর করে টিকে থাকার প্রয়াস আসলে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশের মানুষ আজ পরিপূর্ণভাবে বুঝতে শিখেছে—যে কোনো ষড়যন্ত্র, কালক্ষেপণ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সুযোগ নেই। জনগণ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। জনগণ চায় স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও শান্তি। সুতরাং জামায়াতের পিআর-এর দাবিকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলনের নাটক সাজানো হচ্ছে, তা কখনই গণমানুষের সমর্থন পাবে না।

আজ সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের। বিএনপি যদি সত্যিই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তবে তাদের উচিত হবে জামায়াতের মতো একটি অগ্রহণযোগ্য ও অপরাধী দল থেকে নিজেদের গুটিয়ে আনা। অন্যথায়, বিএনপিকেও ইতিহাস সেই জায়গায় স্থান দেবে, যেখানে জামায়াতকে রাখা হয়েছে—জনগণের প্রত্যাখ্যাত ও বিশ্বাসঘাতক দলের কাতারে।

বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিভ্রান্তি ও কালক্ষেপণের পথ থেকে সরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের প্রকৃত রূপ উন্মোচন করাই হবে গণতন্ত্রপ্রেমী প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।