পিআরের দাবিতে জামায়াতের রাজপথের কর্মসূচি

পিআরের দাবিতে জামায়াতের রাজপথের কর্মসূচি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন কৌশল নাকি পুরনো বিভ্রান্তি?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবারো পুরনো সেই আলাদা পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এই দলটির সাম্প্রতিক কর্মসূচি, বিশেষ করে প্রচলিত নির্বাচনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে জনমত তৈরির যে চেষ্টা; তা স্পষ্টভাবে জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে চলমান জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে বিভ্রান্ত করার কৌশল এবং কালক্ষেপণের অংশ মাত্র। বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক স্রোতধারা বহমান সেটি মূলত

প্রথম পাতার পরা থেকে বর্তমান অবস্থানের ধারাবাহিকতা বুঝার চেষ্টা করাটা অত্যন্ত জরুরি।

জামায়াতে ইসলামী আজ যেভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আক্রমণ করছে, তা মোটেই গণতন্ত্রের পক্ষে কোনো আন্দোলন নহয়। বরং তাদের লয়ান হচ্ছে নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জনঅসন্তোষ আছে, কিন্তু এই অসন্তোষকে জনগণের বৃহত্তর জাতীয় আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত করে সমাধান খুঁজতে হলে এক ধরনের এঁকোর প্রয়োজন। অথচ জামায়াতে ইসলামী সেই ঐকাকে ভাঙার জন্যই প্রচার যুদ্ধে নেমেছে। তারা জনসাধারণকে বোঝাতে চাইছে যে, এই আন্দোলন আসলে নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে, কিন্তু গভীরে তাকালে দেখা যায়, এটি জাতীয় রাজনৈতিক ঐকোর বিরুদ্ধে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া। জামায়াত চায় সমষ্টিগত আলোচনা ভেস্তে দিয়ে নিজেদের কৌশলকে সামনে এনে নিজেদের লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠা করা। ২০ কারণেই তাদের আন্দোলন বর্তমান ঐকামুখী টেবিলের শান্তিপূর্ণ আলোচনার বিরুদ্ধেই পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রক্রিয়া এখন জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে। জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মো আলোচনার সূচনা হয়েছে, তা বাংলাদেশেরা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পক্ষকে এক সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের পথচলা ও গন্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু যখন এই সংলাপ পরিণতির দিকে, তখন হঠাৎ করেই জামায়াত রাজপথে নামলো। এই নামাটিন ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আলোচনা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা এবং বিভ্রান্তির জন্ম দেয়া। কারণ নিজেদের এজেন্ডা যেনতেন প্রকারে চাপিয়ে

দেয়াটা তাদের পুরনো কৌশস্ত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা বারংবার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান- প্রতিটি মুহূর্তেই তারা প্রমাণ করেছে, তারা জাতীয় আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াতে প্রস্তুত।

পিআরের দাবিতে জামায়াতের

মুক্তিযুদ্ধে এদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা যেমন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দোসর ছিল, তেমনি স্বাধীনতার পরও কখনোই তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বা জাতীয় ঐবোর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনি। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তারা প্রমাণ করেছে, গণতন্ত্র নয় বরং ক্ষমতার কাছে আত্মত্মসমর্পণই তাদের নীতি। ১৯৯৬ সালে বিএনপির বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলনে নামা এবং পরে আবার ভিন্ন সুরে কথা বল্য তাদের রাজনৈতিক অবস্থানের দ্বিমুখী চরিত্রকে প্রকাশ করে। এরপরা ২০০৭ সালে ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তারা জাতীয় রাজনীতিকে ভিন্নপথে ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। প্রতিবারই দেখা গেছে, তারা জনগণের স্বার্থ বা জাতীয় আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে না থেকে বরং নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ১০৯৪-পরবর্তী বাংলাদেশের বাস্তবতায়ও জামায়াতে ইসলামী সেই পুরনো কৌশলেই ফিরেছে। যখন গোটা জাতি আওয়ামী ধনাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন গণতান্ত্রিক পথ খুঁজছে, তখন তারা পিআর পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলনের নামে জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে বিভ্রান্ত করছে। এ যেন তাদের পুরনো অভ্যাসেরাই পুনরাবৃত্তি। জনমনে একাটা সংশয় সৃষ্টি করা, রাজনৈতিক আলোচনার গতি বাধাগ্রস্ত করা এবং নিজেরা আলাদা একটি শক্তি হিসেবে টিকে থাকার চেষ্টা- এসবই এখন তাদের প্রধান লক্ষণ। তাদের এই অবস্থান শুধু যে আলোচনার টেবিলকে দুর্বল করছে তাই নয়, বরং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটি গুরুতর হুমকিও তৈরি করেছে। কারণ আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের অর্জনকে সফল করতে হলে যে ঐকা দরকার, সেটিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে জামায়াত। তারা আবারো প্রমাণ করছে, তারা জাতীয় ঐক্য বা জনআকাঙ্খার অংশ নয়। বরং একটি বহিরাগত শক্তি, যারা সব সময় দেশের

স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকে। বাংলাদেশের জনগণ বারবার দেখেছে, জামায়াতে ইসলামী কখনোই নীতি, আদর্শ না মজান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে দাঁড়ায়নি। তাদের মূল লক্ষণ সব সময়ই ছিল নিজেদের দলীয় অস্তিত্ব

ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিসমূহের সম্মিলিত প্রয়াস। জুলাই সনদ এবং রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযো যাগ্য রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরির প্রচেষ্টা চলমান ন রয়েছে। কিন্তু এই আলোচনার গতি ও গুরুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পুরনো কৌশলে নতুনভাবে রাজপথে নেমে এসেছে। এই কর্মসূচি আসলে কার বিরুদ্ধে এবং কেন সেটি উপলব্ধি করতে তাদের দীর্ঘ ইতিহাস

>> পৃষ্ঠা ২ কলাম ৩

রক্ষা করা এবং সুযোগ পেলেই ক্ষমতার অংশীদার হওয়া। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই দলটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে নয় বরং দূর্বল করতে কাজ করেছে। তাদের বর্তমান পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন কৌশল সেই ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা, যা কেবল সার্বভৌম ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষেন জাতীয় ঐকোর প্রয়াসকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে রাজনীতির ময়দানে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছ। অতএব, আজ যখন বাংলাদেশের রাজনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, তখন জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। তাদের আন্দোলন গণতছোর জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত ও বিপন্ন করার জন্য। তাদের লক্ষ্য জনগণের মুক্তি নয়, বরং নিজেদের মদের সংকীর্ণ সংকীর্ণ এজেন্ডা। এজেন্ডা। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ঐক্যবদ্ধ থেকে আলোচনার পথকে এগিয়ে নেয়া এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি রাষ্ট্র কাঠামো বাবস্থ্যর দিকে অগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসে যেমন মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় আকালকার প্রতীক ছিল, তেমনি আজকের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনও সেই আকাঙ্ক্ষারই নতুন রূপ। জামায়াতে ইসলামী সেই আন্দোলনের বিরোধিতা করছে, কারণ তারা সব সময়াই জাতীয্য আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং ইতিজ্যসকে সামনে রেখে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের কোনো সঙ্গী নয়। তারা বরং সব সময়ই এক বিভ্রান্তির উৎস, একটি বিরুদ্ধ শক্তি, যার উদ্দেশ্য জ্ঞাতির সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অস্তিত্বকে দুর্বল করা। অগ্রসর হওয়া।

এ কারণেই একটি বিষয় সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো সহযোগী শক্তি নয়, বরং একটি প্রতিবন্ধকতার নাম। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে এই বাস্তবতাই প্রতিফলিত হয়েছে এবং বর্তমান আন্দোলনও তার ব্যতিক্রম নহয়। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃ ত্বকে এই সত্য উপলব্ধি করে আগামীর পথ চলতে হালে বলে আমরা মনে করি।

লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও জাতীয় ও

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।