সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয়তাবাদের পুনর্জাগরণ
ড. একেএম শামছুল ইসলাম — ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী কেবল একটি বাহিনী নয় বরং এটি একটি জাতির আত্মার স্পন্দন এবং একটি আদর্শ রূপায়ণের অন্যতম পথিকৃৎ। সেই আদর্শ হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এমন একটি দর্শন, যা জনগণের সার্বভৌমত্ব, ধর্মীয় সহনশীলতা, গণতান্ত্রিক চেতনা এবং আত্মমর্যাদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্য, হোক সে একজন সিপাহি বা একজন জেনারেল — এই আদর্শে বিশ্বাসী বলেই তারা দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে আমাদের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, জাতীয় সংগ্রাম এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব থেকে।
বাংলাদেশের জন্ম কোনো সহজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়নি। দীর্ঘ পাকিস্তানি শাসন ও বঞ্চনার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭১ সালে মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। একাত্তরের সাহসী সৈনিকরা রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেন, যা থেকে সৃষ্টি হয় এক অবিনাশী জাতীয় চেতনা।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বিভ্রান্তি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে দেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। এই সময়েই ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতার বিপ্লব ঘটে এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
"আমরা একটি আদর্শভিত্তিক জাতি গঠন করব, যেখানে সশস্ত্র বাহিনী হবে জনগণের বাহিনী।" — শহীদ জিয়াউর রহমান
শহীদ জিয়া সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত করে পেশাগত দক্ষতা, আধুনিকায়ন এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় পুনর্গঠন করেন। এই বাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশন থেকে শুরু করে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে দেশব্যাপী গণ-আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। এটি কেবল রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং জাতীয়তাবাদের পুনর্জাগরণের নিদর্শন।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুসংগঠিত ও আদর্শিকভাবে শক্তিশালী বাহিনী। তাদের সাফল্য শুধুমাত্র অস্ত্রচালনায় নয়, বরং নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা এবং পেশাদারিত্বের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাহিনীর নৈতিক দৃঢ়তা, পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা অপরিহার্য হবে।
শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে এই বাহিনীকে রচনা করেছিলেন এবং তারেক রহমান যেভাবে সেই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, তা বজায় থাকলে বাংলাদেশ একটি আদর্শিক জাতিসত্তা হিসেবেই টিকে থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে এই চেতনা জাগ্রত থাকুক — এই হোক আমাদের কামনা।
0 Comments