ডাকসু নির্বাচন
প্রশাসনিক ভূমিকা, রাজনৈতিক কৌশল এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ
✍️ ড. একেএম শামছুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, ডাকসু কেবল একটি ছাত্র সংসদ নয় বরং জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। এখানকার নির্বাচনি প্রক্রিয়া, ছাত্রদের অংশগ্রহণ, প্রশাসনের ভূমিকা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির কার্যক্রম পরবর্তী জাতীয় রাজনীতির দিক-নির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনের ভূমিকা
নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান নির্ধারক হলো প্রশাসন। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বে বলা হয়, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই পক্ষপাত কেবল নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সম্ভাব্য সহিংসতা উস্কে দেয়ার পথকেও সুগম করছে।
নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেললে কর্তব্যরত প্রশাসনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে ধরা হয়। অতীত অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, প্রশাসনিক পক্ষপাত যত বাড়ে সহিংসতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কাও তত বৃদ্ধি পায়।
জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থান
ক্যাম্পাস রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়নের শিকার হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ঘরানার সমর্থিত প্যানেলটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা যায় "resilience of political identity"।
তবে এই জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখতে সাংগঠনিক শক্তিই যথেষ্ট নয়। আধুনিক রাজনীতিতে narrative-building এবং media framing জনমত প্রভাবিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল
একটি বিশেষ গোষ্ঠী যদি উপলব্ধি করে যে তাদের জয়ের সম্ভাবনা নেই, তবে তারা নির্বাচন বানচাল করার কৌশল নিতে পারে। যেমন:
- গোপন তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা।
- পরিকল্পিত সহিংসতা সৃষ্টি করা।
- জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা।
- পরিকল্পিত মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়া।
প্রতীকী তাৎপর্য
ডাকসু নির্বাচনের সরাসরি প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে সীমিত হলেও এর প্রতীকী তাৎপর্য গভীর। বিজয় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিকল্প রাজনীতির ইতিবাচক বার্তা দেবে, আর পরাজয়কে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ব্যর্থতা হিসেবে প্রচার করবে। তাই এটিকে জাতীয় রাজনীতির একটি "testing ground" বা "Acid test" হিসেবে দেখা যেতে পারে।
উপসংহার
তিনটি সুস্পষ্ট উপসংহার টানা যেতে পারে:
- প্রশাসনের নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা নিশ্চিত করা।
- জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে narrative-building ও media framing জোরদার করতে হবে।
- সহিংসতা এড়াতে সকল পক্ষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাখা।
পরিশেষে বলা যায়, ডাকসু নির্বাচন কেবল ক্যাম্পাস রাজনীতির নয় বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যৎ পথচলার একটি অন্যতম সূচক ও পরিমাপক।
0 Comments